বন্দ্যোপাধ্যায় জনপ্রিয় লেখনী সমূহ পডুন এবং সংগ্রহে রাখুন
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬) কথাসাহিত্যিক। খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের নিকট মালবদিয়া গ্রামে। হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট। সেটেলমেন্ট বিভাগে চাকরি করতেন এবং শেষজীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম ‘،‘ মানিক তাঁর পিতার চাকরিসূত্রে মানিককে দুমকা ، আড়া ، সাসারাম ، কলকাতা ، ব্রাহ্মণবাড়িয়া ، বারাসাত ، টাঙ্গাইল ও মেদিনীপুরের নানা স্কুলে প্রাথমিক ও ও তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ন মিশন কলেজ আইএসসি (১৯২৮) পাস করে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি-তে ১৯২৮ (১৯২৮) হন، কিন্তু পাঠ অসমাপ্ত রেখেই পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করা ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সহোদরের সঙ্গে যৌথভাবে ‘উদয়াচল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস পরিচালনা একইসঙ্গে তিনি বঙ্গশ্রী (১৯৩৭-৩৯) পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। কিছুদিন তিনি ভারত সরকারের ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের প্রভিন্সিয়াল অরগানাইজার এবং বেঙ্গল দপ্তরে প্রচার সহকারী পদেও কর্মরত ছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ত্রিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় বিচিত্রা তাঁর প্রথম প্রথম গল্প ‘অতসী ((১৯২৮) প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পরে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মর্যাদা লাভ করেন। শতকের তিরিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র ধারার বিরোধিতা করে যে কল্লোল গোষ্ঠীর আবির্ভাব সেই، সেই গোষ্ঠীর লেখক হিসেবে মানিকের স্বতন্ত্র পরিচয় ওঠে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের প্রথম মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড ، ফ্রয়েড ، ইয়ুং প্রমুখ প্রভাবিত হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি মার্কসবাদে দীক্ষা নেন ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হন এবং আমৃত্যু এই দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। মাধ্যমে মার্ক্সের শ্রেণিসংগ্রামতত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং মানুষের মনোরহস্যের জটিলতা উন্মোচনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষশিল্পী। পাশাপাশি গ্রামজীবনের দ্বন্দ্বসঙ্কুল পটভূমিও তাঁর উপন্যাস ও গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে। উপন্যাস ও দুশো চবিবশটি গল্প তিনি রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাস: জননী (১৯৩৫) ، দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫) ، পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬) ، পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬) ، শহরতলী (১৯৪০-৪১) ، চিহ্ন (১৯৪৭) ، চতুষ্কোণ (১৯৪৮) ، সার্বজনীন (১৯৫২) ، আরোগ্য (১৯৫৩) প্রভৃতি؛ আর ছোটগল্প অতসী মামী গল্প (১৯৩৫) ، প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭) ، সরীসৃপ (১৯৩৯) ، সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩) ، হলুদ পোড়া (১৯৪৫) ، আজ কাল (১৯৪৬) ، আজ কাল পরশুর (১৯৪৬) ، মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ (১৯৫০) ، ফেরিওয়ালা (১৯৫৩) ইত্যাদি। মাঝি ও পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাস দুটি তাঁর বিখ্যাত রচনা। দুটির মাধ্যমেই তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মাঝি চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে। বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রচনায় মানুষের অন্তর্জীবন ও মনোলোক বিশ্লেষণে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। প্রথম দিকের রচনায় নিপুণভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে মানুষের অবচেতন মনের নিগূঢ় রহস্য। বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তর পরবর্তী রচনায় তাঁর সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নাগরিক জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তার নিখুঁত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তাঁর এ পর্যায়ের রচনায় বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চরম দারিদ্রে্যর হয়েছেন তা ، তা সত্ত্বেও তিনি সাহিত্যচর্চাকেই পেশা হিসেবে অাঁকড়ে ধরেছেন। সময় তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর জন্য সাহিত্যিক বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। এসব কারণে দারিদ্র্য মানুষের স্বভাবে পরিবর্তন আনে ، বিশেষত যৌনাকাঙ্ক্ষার উদরপূর্তি কী সমস্যার সৃষ্টি করে তার একটি বাস্তব চিত্র অঙ্কিত বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। পূর্ববঙ্গ প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপনের প্রয়াসে সক্রিয় ছিলেন। খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু।